হাড়কিপটে - বাংলা হাঁসির গল্প । Bangla Hashir Golpo Harkipta, funny story

হাড়কিপটে

হাড়কিপটে - বাংলা হাঁসির গল্প । Bangla Hashir Golpo Harkipta, funny story


বিয়ের পর থেকেই নিজের কেনাকাটা ইচ্ছেমত করা হয়ে উঠছে না। স্বামীজি সব কেনাকাটা নিজের হাতে করে। নিজের ইচ্ছায় যদিও কিছু কিনে ফেলি সেটা দেখামাত্র মুখ বাংলা পাঁচের মত করে বলে, এসব কি কিনছ? এত টাইট, রংচঙে।  আগামী বছর তো পরতে পারবানা, একটু বড়  দেখে কিনবা যেন আরো কয়েক বছর ব্যবহার করতে পারো। তখন আমি অবাক  নয়নে নিজের দিকে তাকিয়ে ভাবি আমি কি আরো বড় হবো!!! আমার স্বামীর এই এক প্রবলেম যা কিনব সব  যেন এই অর্থ বছরে শেষ না হয়ে আরো কয়েক অর্থবছরে পরা যায় এমন ভাবে কিনতে হবে। আমারও  এককথা একটা ব্যবহারের জিনিস যদি স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে না পারি তবে কিনে কি লাভ! হোক সেটা কাপড়, জুতা কিংবা অন্য কোন সরঞ্জাম। আমি  এখন যা কিনব সেটা স্বাচ্ছন্দ্যে একদিনের জন্য হলেও যদি  ব্যবহার করে সন্তুষ্টি পাই  তবে তাই যথেষ্ট। এইত সেদিন একটা অনুষ্ঠানে যাবো। ছেলে নতুন ড্রেস কিনবে, নতুন জুতা কিনবে। ছেলের ইচ্ছা এবার স্যুট আর বুট  কিনবে। আমার পরিচিত ভালো ব্রান্ডের একটা দোকানে যেতে চাইলে স্বামীর বাঁধার মুখে পরতে হয়েছিল, সে তার পরিচিত একটা দোকানে নিয়ে গেলো। ৫০% ডিসকাউন্ট চলছে। ছেলে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে এখান থেকে কিনবে না। কিন্তু স্বামী আমার কটমটে চোখে তাকিয়ে ছেলেকে ভয় দেখায়। ছেলে আমার চুপ ,সাথে আমিও চুপ। খালি দেখছি তার কান্ড। আমরা তিনজনে মিলেই স্যুট দেখছি। ছেলের বাবা যা পছন্দ করে তা আমার আর ছেলের পছন্দ হয়না। অবশেষে ছেলে সব স্যুট থেকে একটা স্যুট পছন্দ করলো, গায়ে দিয়ে দেখলো পারফেক্ট মাপ। আমি মুগ্ধ নয়নে ছেলের দিকে তাকালাম, এই স্যুট যেন ওর মাপ দিয়েই ওর জন্যই বানানো হয়েছিল। একটা নিউ কালার স্যুট বেশ মানালো ছেলেকে। স্যুটের মাপ সব ঠিক দেখে আমারও ভালো লাগলো ছেলেও খুশী। কিন্তু ছেলের বাবার বাধ সাধলো। তার এক কথা এই স্যুট নেয়া যাবে না। আমি বলছি নিলে এটাই নিব নয়তো নিব না। ছেলের বাবার কথা এটা ওর জন্য ছোট হবে। কারণ এটি আগামী বছর পরতে পারবে না এই বলে সে আরেকটা স্যুট এনে ছেলেকে পরালো। স্যুটের সাইজ আমার ছেলের থেকে বড়। এটি নাকি আরো পাঁচ বছর পরতে পারবে। আমি নিজের মেজাজ ঠিক রাখতে পারলাম না। দোকানদারের সামনেই বললাম, যে কাপড় এখন পরতে পারবেনা, পাঁচ বছর অপেক্ষা করে পরতে হবে, এমন কাপড় আমি কেন কিনব?
ছেলের বাপ বলে, এত বেশী বুঝনা। একটা কাপড় কিনে যদি কয়েক বছর পরতেই না পারলাম তাহলে পয়সা উসুল হবে !!
আমি বললাম, এই স্যুট পরলে তো সবাই বলবে তোমার মাপের স্যুট ছেলেকে পরাইছো।
ছেলের বাবা বলে, সমস্যা কি! আমিও মাঝে মাঝে পরলাম। একটা স্যুট দিয়ে বাপ ছেলের চলে যাবে কয়েক বছর। ছেলের বাপের কথা শুনে কান দিয়ে আমার ধোঁয়া বের হচ্ছে। মুনডা চাইতাছিল কিছু একটা  করতে, তারপরেও নিজেকে কন্ট্রোল করে বললাম, দেখো ছেলের স্যুটের কাঁধ তার কাঁধের বাহিরে, স্যুটের হাতা হাতের  বাহিরে,  স্যুটের লম্বা হাটুর কাছে গিয়ে ঠেকছে। এটা স্যুট নয় যেন আলখাল্লা। লোকে হাসবে দেখে।  ছেলের বাবা বলেন, এটা সমস্যা না, হাতা গুটিয়ে দিব, আর কাঁধ সমস্যা না, মোটা লাগবে ছেলেকে বলেই স্যুট নিয়ে নিলো ডিসকাউন্টে। আমি শুধু তাকিয়ে দেখলাম । পরে জুতার দোকানে ঢুকলো। ওর পা থেকে দুই সাইজ বড় এক জোড়া জুতা কিনলো যেন আরো পাঁচ বছর পরতে পারে। ইচ্ছে করছিল মাথাটা ফাটিয়ে দিতে, দাতে দাত চেপে কন্ট্রোল করলাম। শপিং শেষে কিছু খাওয়া হলো না। স্বামীজি বলল তার পেটের অবস্থা ভালো না বাসায় গিয়ে গরম ভাত খাবে।
শপিং করে মানুষ খুশী হয়, আমি আর আমার ছেলে মন মরা হয়ে আছি। পরের দিন মন খারাপ নিয়েই অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য রেডি হলাম। ছেলে বাপ রেডি হয়ে আসলো। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখলাম ছেলে  স্যুটের ভিতরে ঢুকে পরছে, দেখে অনেকটা  জোকার লাগছে, আর যখন ছেলে হাটছে তার পা জুতো থেকে খুলে যাচ্ছে আবার জুতোর ভিতর ঢুকছে। সে খুব আস্তে আস্তে হাটছে।  এটা দেখে আমি স্তম্ভিত। ওর জুতা দেখে মনে হলো অন্য কারো জুতা ধার করে পরে আসছে। এদিকে ছেলের বাবার অবস্থা আরো ভয়ানক। পাঞ্জাবী পরেছে কিন্তু পায়জামা দেখা যাচ্ছে না। পাঞ্জাবী ঝাড়ু দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। পা পুরা পাঞ্জাবীতে ঢেকে গেছে। আমি বুঝলাম না ছেলে বড় হলে তার স্যুট হয়তো পারফেক্ট লাগবে একসময়  কিন্তু ছেলের বাবার হিসেব মিলাতে পারলাম না!!
# রম্য রচনা
# হাড়কিপটে 

0/Post a Comment/Comments