জঙ্গলের রহস্য

#চতুর্থ_পর্ব
রাত অনেক হয়েছে তাই ঘুমিয়ে গেলাম। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে নিউজ ফিডে সবার পোস্ট গুলো দেখতেছি। এমন সময় দরজার বেল বেজে উঠলো। মনে করলাম রায়হান বা আজাদ স্যার আসছে।
কিন্তু দরজা খুলে দেখলাম মামা আর মামার বন্ধু সফিক সাহেব হাজির। মামারা এতো তাড়াতাড়ি আসবে ভাবি নাই। দেখলাম আমাদের থেকে মামার এ বিষয় জানার আগ্রহ বেশি।
মামাকে পরের ঘটনা খুলে বললাম। মামা শুনে বললো ঘটনাটা সত্যি ভয়ানক। তার আগ্রহ আরো বাড়লো। আমি অবাক হচ্ছি। এমন ভয়ানক বিষয় নিয়ে তার কোনো ভয় নাই। তার কাজই হলো এসব বিষয়ের রহস্য বের করা। তার ভয় পেলে তো চলবে না।
১১ টার দিকে স্যার আর রায়হান আসলো। সাথে তারা আরো কিছু প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে এসেছে। জঙ্গলটা আসলেই অনেক বড়। হয়তো ঢুকলে হয়তো ২-৩ পর ছাড়া বের হওয়া যাবে না।
কালকে দাদুর বলা পড়ের কথা গুলো আর ড্রাগন গ্লাসের তীর গুলো দেখালাম। সবাই মোটামুটি রকমের অবাক হয়েছে। সবাই তীর গুলোকে দেখতেছে। এমন সময় মামা বলে উঠলো
- আচ্ছা সেখানে যে পিশাচের সাথে ১২ পিশাচ কন্যা আছে এই বিষয়ে ওনি কি নিশ্চিত। এর থেকে বেশিও থাকতে পার আবার অন্য পিশাচও থাকতে পারে। আমার একদম প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে।
মামার কথা গুলো সবাই আমরা ভাবতে লাগলাম। অন্য কিছু থাকলে কি করবো আমরা। মামার কথা আমাদের ভয়কে আরো বাড়িয়ে দিলো৷ কিন্তু ভয় পেলে তো চলবে না। আমাদের ভয়কে জয় করতে হবে।
আমরা আমাদের সফর এর জন্য প্লানিং করতে থাকলাম। ছাদে গিয়ে সবাই দূরের জঙ্গলের বাড়িটাকে দেখতে লাগলাম। গুগল ম্যাপে জায়গাটার দূরত্ব মাপতে পারছিলাম না। গুগল ম্যাপেও জায়গাটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।
জঙ্গলের মধ্যে ছোট ছোট পাহাড় ছিলো। সবচেয়ে বড় পাহাড়ের উপরে বাড়িটা ছিলো। তাই দূর থেকে বাড়িটা খালি চোখে দেখা যাচ্ছিলো
বুঝতে পারলাম ঢুকলে হয়তো বড় বিপদেই পড়বো। কিন্তু জীবনে তো বিপদ আসবেই। বিপদকে জয় করতে হবে।
দিনটা শুক্রবার -
আমরা সবাই সকাল থেকে রেডি হচ্ছি জঙ্গলে যাওয়ার জন্য। রায়হান আর মামা বাইরে গেছে কিন্তু খাবার কিনতে। জঙ্গলে কয়েক রাত কাটাতে হবে তাই খাবারও নিতে হবে।
সব প্রস্তুতি শেষ। রাস্তা পুরোটা ফাকা। সময় ১২ঃ৩০টা সব লোক নামাজ পড়তে গেছে। পুলিও পাহাড়ায় নাই। সুযোগ বুঝে ঢুকে পড়লাম জঙ্গলে। শুরু হলো জীবনের ১ম রহস্য বের করার সফর।
দোয়া পড়তে পড়তে জঙ্গলের মধ্যে চলতেছিলাম। জঙ্গল ঘন হওয়ায় চলতে প্রচুর সমস্যা হচ্ছিলো। অল্প দূরত্ব যেতে অনেক সময় লাগতেছিলো। তবুও চলতে লাগলাম।
যতো এগিয়ে যাচ্ছি ভয় ততো বাড়তেছে। পিশাচের ভয় তো ছিলোই কিন্তু সাথে বন্য প্রাণীর ভয়ও ছিলো। অনেকটা সময় যাওয়ার পরও কিছু চোখে পড়লো না। সময়টা বিকাল ৩ টা। বসে রেস্ট নিচ্ছিলাম সবাই।
এতোটা পথ আসার পরও কোনো কিছু দেখতে পাই নাই। জানিনা কতটা ভেতরে যেতে। উঠে আবার হাটতে শুরু করলাম। একটা বিষয় লক্ষ করলাম। আমাদের সবার মোবাইলে কোনো নেটওয়ার্ক নেই।
কিছু দূর এগিয়ে যেতেই কঙ্কাল দেখতে পেলাম। অনেক গুলো কঙ্কাল এক সাথে পড়ে আছে। আমরা সবাই ভয় আতঙ্কিত হয়ে গেলাম। আরো এগিয়ে যেতে লাগলাম।
একটা বিষয় দেখলাম। আমার হাতে থাকা ঘড়ি চলতেছে না। মোবাইল বের করলাম কিন্তু চালু হচ্ছে না।
সন্ধা হয়ে এলো। আমাদের ভয় আরো বেড়ে গেলো। হয়তো আর কিছু সময় পড়ে তাদের তান্ডব শুরু হবে।
ঠিক তখনই কিছু লোক এসে আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ভয় পেয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা তাদের ভাষায় কথা বলতেছিলো। তারপর কিছু লোক এসে আমাদের হাত দড়ি দিয়ে বেধে দিলো।
তারপর লোক গুলো আমাদের দড়ি দিয়ে টানতে টানতে কোথাও নিয়ে যেতে লাগলো। এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলাম বড় বড় গাছ দিয়ে তেরি একটা গেট। দেখতে সম্ভব সুন্দর।
আমাদের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হলো। ভিতরে ঢুকতেই আমরা অবাক হয়ে গেলাম। এতো ভয়ানক আর বড় জঙ্গলের মধ্যে এতো সুন্দর জায়গা। তাছাড়া এখানে মানুষও বাস করে। অবাক না হয়ে পাচ্ছি না।
চারদিকটা কেমন যেনো রুপকার মতো মনে হচ্ছিলো। লোক গুলোর বাড়ির গুলোও রুপকার বাড়িও মতো। বিভিন্ন ধরণে Fantasy মুভিতে পরীদের বাড়ি দেখতাম। বাড়ি গুলো ঠিক তেমনই।
আমাদের একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হলো। বড় একটা বাড়ি সামনে দাড়িয়ে আছি। আসে পাশের লোক গুলোকে দেখছিলাম। সবাই নিজের কাজে ব্যাস্ত।
মনে মনে হয় হইতেছে। মনে মনে ভাবতেছিলাম এরা কি আমাদের পিশাচের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। হয়তো এটা আমাদের শেষ সময়।
আমাদের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হলো। দেখলাম বিভিন্ন লোক বিভিন্ন কাজে ব্যাস্ত। আমাদের ধরে লোক গুলো একটা রুমে নিয়ে গেলো। রুমে যাওয়া পর কয়েকটা লোক এসে আমাদের দেখে গেলো৷
কিছু সময় পর একজন লোক আসলো। তার পোশাক সবার থেকে আলাদা। ভাবলাম এই লোকটাই হয়তো পিশাচ। লোকটার সাথে আরো কয়েকজন লোক আসলো৷
তাদের সাথে আমার ভয়ে কেউ কথা বলতে পারতেছিলাম না। কিন্তু হঠাৎ মামা বলে উঠলো
- আপনারা কারা? আপনারাই কি সেই পিশাচ?
মামা কথা শুনে লোক গুলো হাসতে লাগলো। তারপর সবার থেকে আলাদা পোকাশ পড়ালোকটা বলতে লাগলো
- হুম। আমরাই পিশাচ। তোমাদের রক্ত নিবো।
বলে হাসতে লাগলো। আমরা সবাই ভয়ে পেয়ে গেলাম। এর মধ্যে রায়হান কান্না করা শুরু করে দিয়েছে। রায়হান ছেলে বরাবরই ভীতু। সবার নিরবতা ভেঙে লোকটা বলতে লাগলো
-তোমরা কারা আর জঙ্গলে কেনো আসলে?
আমরা সবাই ভয়ে পেয়েছিলাম। ভয়ে সব বলে দিলাম। আমরা এখানে কেনো এসেছি। কি কারণে এসেছি। তারপর লোকটা হাসতে হাসতে বলতে লাগলো
- আমাদের দেখেছো। আমরা পুরো সম্প্রদায় তাদের সাথে পারি না। আর তোমরা ৫ জন আসছো তাদের রসহ্য বের করতে। ( লোকট)
- আপনারা কারা? ( আমি)
- আমরা উইচার জাতি৷ আমাদের পুরুষের উইচার বলা হয় আর মহিলাদের বলা হয় উইচ। আমরা মানুষ। তবে জাতি গতো ভাবে আমাদের মাঝে সাধারণ মানুষ থেকে একটু আলাদা ধরণের শক্তি পাই। তাই আমরা সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা। আমাদের সবাই বিভিন্ন ধরনের শক্তির অধিকারী। কেউ অদৃশ্য হতে পারে, কেউ অন্যর রুপ ধারণ করে আরো অনেক রকম৷ মানুষের থেকে আমাদের শরীরের শক্তি বেশি। তাই আমরা মানুষের থেকে কাজও বেশি করতে পারি। তবে আমারা সবাই উড়তে পারি। আমাদের সবার একটা বিশেষ ধরণের ঝাড়ু আছে যা দিয়ে আমরা উড়ে থাকি। আমাদের আদি বাস ছিলো স্কটল্যান্ডে। ইতিহাসে উইচ হ্যান্ট মানে একটা ঘটনা আছে। সেই ঘটনার কাহিনী হলো এক সাথে আমাদের জাতির ২৫০০ উইচার দের হত্যা করা হয়। আমাদের সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা খুব কম ছিলো৷ তখনকার লোকেরা বিশ্বাস করতো আমরা যাদু করে মানুষদের ক্ষতি করি। তাই আমাদের নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। আমরা পালিয়ে এসে এখানে বসবাস শুরু করি।
প্রকৃতি কথা আমরা মানুষদের উপর আমাদের শক্তি ব্যবহার করি না। আমাদের পূর্বপুরুষদের নিয়ম এটা।
তোমরা যাদে বাসায় থাকে তিনি আমাদের একজন পূর্বপুরুষ। তিনি ৫০০ বছর ধরে বেচে আছেন। তিনি টেলিপ্যাথির মাধ্যে আমাদের সবার সাথে কথা বলতে পারে না।
তিনি আমাদের তোমাদের কথা বলছেন। তাি আমরা জঙ্গলে গিয়ে নিয়ে আসি। এতোক্ষণ জঙ্গলে থাকলে তোমাদের রক্ত শূন্য লাশ পড়ে থাকতো।
আমাদের উপর পিশাচরা আক্রমাণ করতে পারে না। আমাদের এলাকায় ওরা কখনো আক্রমণ করতে পারবে না। আমরা ওদের সাথে অনেক বার যুদ্ধ করেছি। কিন্তু তাদের শক্তির সাথে আমরা সব সময় হেরে গেছি। আমাদের অনেক লোক মারা গেছে। আমরা অনেক বার জঙ্গলকে তাদের অভিশাপ মুক্ত করতে চেয়েছি। কিন্তু পারি নাই। তোমাদের মনে আর কোনো প্রশ্ন থাকলে বলতে পারো
লোকটার কথা শুনে অবাক না হয়ে পাড়লাম না। শুধু গল্পেই শুনেছি উইচ দের কথা কিন্তু আজ সত্যি নিজের চোখে দেখলাম। এরা মানুষই কিন্তু তাদের একটু অলৌকিক শক্তি থাকে। তাই সাধারণ মানুষ এদের ডাইনিও বলে থাকে।
লোকগুলো আমাদের সবার পরিচয় নিলেন। তারপর আমাদের হাতে বাধন খুলে দিলেন। তারপর আমাদের একটা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো।
বাড়িটা এতোটা সুন্দর ছিলো বলে শেষ করা যাবে না। ছোট থেকে গল্প পড়েছি উইচ দেট জগৎ নাকি অনেক সুন্দর। আজ নিজের চোখে দেখলাম তাদের জগতটা কতোটা সুন্দর ।
বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই অবাক হয়ে গেলাম। যেটা দেখবো কল্পনা করি নাই......
চলবে....
( গল্পটা কেমন হয়েছে জানাবেন। ভুল গুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)
Post a Comment