জঙ্গলের রহস্য

#জঙ্গলের_রহস্য
#পঞ্চম_পর্ব
বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই অবাক হয়ে গেলাম। যেটা দেখবো ভাবি নাই। ভিতরে ঢুকতেই দেখলাম দাদু দাড়ি আছে। আমাদের দেখে তিনি হেঁসে দিলেন। আমাদের মনে অনেক গুলো প্রশ্ন জাগতেছে। যে পথটা আমরা ৭-৮ ঘন্টা হেঁটে আসলাম। আর তিনি এতো তাড়াতাড়ি।
ভিতরে নিয়ে আমাদের বসতে বললেন তিনি। আমরা সবাই বসলাম। আমি ঘরের চারদিকটা দেখতে লাগলাম। তাদের বাড়ি গুলো যেমন সুন্দর তাদের ঘর গুলোও। ঘরের ভিতরে বিভিন্ন ধরণের ফুলের গাছে সাজানো। মনে হচ্ছে এটা কোনো পরী রাজ্য।
দাদু হয়তো বুঝে গেছেন আমরা তাকে দেখে অবাক হয়েছি। তাই তিনি বলতে শুরু করলেন
- আমাকে দেখে অবাক হওয়ার কিছুই নাই। যেখানে আমরা পুরো উইচার ও উইচ জানি মিলে তাদের সাথে পারি নাই আর তোমরা পাঁচ জন। আমি ওদের তোমাদের কথা বলে রাখছিলাম। তাই তারা তোমাদের নিয়ে আসছে।
আমরা দুইজন ছেলে ছিলো। দুই জনই পিশাচ ও পিশাচ কন্যার সাথে যুদ্ধ করে মারা গেছেন। তারা মারা যাওয়া পর থেকে আমরা কখনো আর পিশাচদের সাথে যুদ্ধ করি নাই।
আমি চাই না আর কারো ছেলে সন্তান বাবার প্রাণ নষ্ট করতে। শহরের মানুষদের জন্য কষ্ট হয়। তাদের বিনা করণে তাদের প্রাণ দিতে হয়। কিন্তু আমাদের কিছু করার উপায় নেই।
- আপনাদের তো কোনো দোষ নেই। কিন্তু কোনো উপায়ে কি ওদের কি ওদের মারা সম্ভব না ( আমি)
- আছে দুইটা উপায়। প্রথমটা তীর দিয়ে মারা। কিন্তু তাদের উড়াল দেওয়া ক্ষমতা অনেক বিদ্যুতের গতিতে তারা উড়তে পারে। এই গতিতে তাদের তীর লাগানো অসম্ভব। এটা দিয়ে আমরা কখনো তাদের মারতে পারি নাই।
২য় উপায় আরো ভয়ানক। সোজা সেই রাজ বাড়িতে ঢুকতে হবে। রাজবাড়ীর গোপন কক্ষে এটা ছোট পুকুর আছে। সেই পুকুরের পানি গুলো জ্বালিয়ে দিতে হবে। কিন্তু পুকুরের পানি সাধারণ আগুন দিয়ে জ্বলবে না। এর জন্য নীল শিখার আগুন লাগবে।
ওই নীল শিখার আগুন রাজবাড়ীর আরেকটা কক্ষে রাখা আছে। এই দুই ঘরে ঢুকা অসম্ভব। এই রাজবাড়ীর আসে পাশে যাওয়া অসম্ভব তাদের এই জায়গাটা অনেক গুলো নেকড়ে পাহাড়া দেয়। যেগুলো শয়তানের নেকড়ে বলা হয়।
এই নেকড়ে গুলো মানুষের মাংস খায়। তবে পরিমাণ মতো। তাড়া যে মানুষ গুলো ধরে নিয়ে আসতো তাদের মাংস খায় আর যাদের মাংস দরকার পড়ে না তাদের দেহ গুলো সেই রাস্তার পাশে রাখা হয়। আর যে গুরুত্বপূর্ণ ঘর দুটো আছে সেই গুলোতে দুইটা ভয়ানক প্রাণী থাকে। যাদের দিকে কেউ তাকাতেও পারে না। তাদের দেখলে যে কেউ বমি করে দিবে।
তাদের দেখতে এতোটা ভয়ানক আর কুৎসিত, তাদের গা থেকে খুব খারাপ একটা গন্ধ আসে। গন্ধে অজ্ঞান হয়ে যাবে অনেকে।
( কথা গুলো শুনেই রায়হান কেমন করতে শুরু করলো। তাকে তাড়াতাড়ি আমরা ওয়াসরুমে পাঠিয়ে দিলাম)
তাদের এখানে শুধু পিশাচ আর পিশাচ কন্যা থাকে না। তাদের জাতির একটা অংশ বাস করে। যারা মানুষের রক্ত খেয়ে তাদের শক্তি বাড়ায়। অন্য জায়গার পিশাচ গুলো এখানে আসে শয়তানের পূজা করতে। তাদের কাছে শয়তানের পূজা করার উত্তম জায়গা নাকি এটা। পৃথিবীর সব পিশাচদের আত্নার মৃত্যু ওই পুকুরের পানিতে আছে। জ্বালিয়ে দিলেই সব শেষ।
আমরা ১ম শুনে যতোটা সহজ ভাবছিলাম কিন্তু ততোটা সহজ একদমই না। কল্পনার বাইরে গিয়ে ভয়ানক। রায়হান আর মামার বন্ধু আর স্যার সবাই ভয় পেয়ে গেছে। আমি আর মামার মধ্যে একটুও ভয় পাই নাই।
আমাদের মাঝে এর রহস্য আরো জানার আগ্রহ বাড়তেছে। আমরা এই রহস্যের শেষ বের করেই ছাড়বো। হঠাৎ মামা বলে উঠলো
- আমরা আবার তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবো। আমরা আবার যুদ্ধ করবো। এই জঙ্গলকে আবার মুক্ত করে ছাড়বো। পুরো পৃথিবীর পিশাচদের মেরে ফেলবো।
মামার কথা শুনে আমার শরীরে নতুন শক্তি এলো। আমিও মামার সাথে বললাম
- হ্যা। আমরা তাদের ধ্বংস করবো। শহর থেকে আর বিনা কারণে মানুষদের মরতে দিবো না।
- তাদের সাথে যুদ্ধ করার পর্যাপ্ত শক্তি আমাদের নাই। আমাদের আগে শক্তি বাড়াতে হবে তারপর যুদ্ধ লরতে হবে। ( দাদু)
আমার মনে কয়েকটা প্রশ্ন জাগলো। তাই দাদুকে প্রশ্ন করলাম

- আপনি আমাদের ভেতরে আসতে দিলেন কেনো? আর আমাদের এই কথা গুলোতো আপনার বাড়িতেও বলতে পারতেন। আর আপনারা কখনো তাদের ওখানে যেতে পারে নাই তাহলে তাদের রহস্য জানলেন কেমন করে? আর আপনাদের এখানে পিশাচরা আক্রমণ করতে পারে না কেন?
আমি এক সাথে সব প্রশ্ন করলাম। কেউ হয়তো কাউকে এতো গুলো প্রশ্ন এক সাথে করে না। আমার ভিতর এতোটাই জানার আগ্রহ ছিলো যে সব প্রশ্ন একসাথে করে বসলাম। দাদু বলতে শুরু করলেন
- আমি যদি তোমাদের আমার বাসায় সব কথা গুলো বলতাম তোমার কেউ বিশ্বাস করতে না। সবাই আমাকে পাগল বলতে। তাই আর তোমাদের আমি সেখানে কিছু বলি নাই। আর পৃথিবীর কেউ জানে না আমরা এখানে বসবাস করি। পৃথিবীর মানুষ জানলে হয়তো আর আমাদের বাচতে দেবে না পৃথিবীতে। আর তোমাদের উপর আমরা পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে তোমার আমাদের এই জায়গার কথা গুলো কাউকে বলবে না। তাই আমি তোমাদের এখানেই নিয়ে আসি। বাইরে জঙ্গলে থাকলে হয়তো তোমরা পিশাচের শিকার হতে।
আর আমাদের উইচার জগতে আমার ছেলে ছিলো সবচেয়ে শক্তিশালী। তাদের শক্তি সবার থেকে বেশি। আমরা কেউ জানি না কিভাবে সে তাদের ওখানে ঢুকেছিলো। এবং এই রহস্য গুলো জানতে পেরেছে। কিন্তু রহস্য এবং তাদের গোপন কথা গুলো জেনে আসার পথে সে নেকড়েদের চোখে পড়ে।
নেকড়ে গুলো তার উপর আক্রমণ করে। সে কোনো ভাবে তাদের থেকে বাচতে পারে কিন্তু অনেকটা আহত হয়ে।সে ফিরে আসার কিছু সময় পড়ে সে মারা যায়। তাকে আমরা কেউ বাচাতে পারি না।
তারপর পিশাচরা জানতে পাড়ে তার কথা। তারপরেই শুরু হয় পিশাচ আর উইচার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে আমাদের অনেকে মারা যায় এবং আমার ২য় ছেলেও। সেই যুদ্ধে আমরা পারি নাই পিশাচদের সাথে। আমরা পালিয়ে আসি।
বর্তমান আমাদের এখানে জনগণের সংখ্যা খুবই কম। আমরা আমাদের শক্তি বাড়ার চেষ্টা করছি। আর আমাদের এই সম্পূর্ণ এলাকাটা আমার পূর্বপুরুষদের শক্তি দিশে এজটা সুরক্ষা বলয় তৈরি করে দিয়েছে। যার কারণে এখানে আর তাদের আক্রমনের ভয় নাই আর তাড়া কখনো পাড়বে না।
আর এই জঙ্গল একটা অদ্ভুত মায়া আছে। এর রহস্য আমরা কেউ জানি না আজ পর্যন্ত। জঙ্গলের উপর দিয়ে কখনো কেনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। আর ক্যামেরাও এর সঠিক চিত্র আসে না। আর এর থেকে ভালো জায়গা আমাদের বসবাসের জন্য ছিলো না। তাই আমরা এখানেই বসবাস শুরু করি।
আর আমরা সয়ংসম্পূর্ণ। বাইরের জগতের সাহায্য ছাড়া আমরা চলতে পারি। আমরা আমাদের সকল জিনিস নিজেরাই উৎপাদন করতে পারি। আশা করি তোমাদের এখানে থাকতে অসুবিধা হবে না।
কথা গুলে তিনি একসাথে বলে দিলেন। যতো জানতেছি আমার জানার আগ্রহ ততো বাড়তেছে। কিছু সময় পর আমাদের খাওয়ার জন্য ডাকলেন। আমরা খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে গেলাম।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠে। বাইরের পরিবেশ টা দেখতে গেলাম। এর কিভাবে জীবন যাপন করে তা দেখার জন্য।
আমি আর মামা উঠে পড়েছি। বাকিরা এখনো ঘুমিয়ে আছে। আমি আর মামা বাইরে গেলাম। তাদের এই জায়গা একদম সাজানো। কোনো আধুনিক পৃথিবীর ছোঁয়া নেই। তারা তাদের শহরকে তাদের মতো সাজিয়ে নিয়েছে।
এখানের সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যাস্ত। সবাই কোনো না কোনো কাজ করে। তাদের এখানে টাকা পয়সা কিছু নেই। তাদের কেনো কিছু কিনতে টাকা লাগে না। এরা পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে কোনো কিছু নিয়ে থাকে।
যারা ফসল ফলায় তারা ফসলের বিনিময়ে পণ্য কিনে। এইভাবে তাদের চলতে থাকতে। পৃথিবীতে টাকার জন্য কতোই না রক্তারক্তি হয়। কিন্তু এখানো কোনো টাকাই নেই তারপরেও এটা তাদের থেকে হাজার গুণ সুখে আছে।
তাদের এখানে কোনো ইলেক্ট্রিসিটির ব্যবস্থা নেই তারপরও তাদের এখানটা রাতে অন্ধকার থাকে না। তারা বিশেষ ধরণের মোম বাতি জ্বালায় । যা দিয়ে বাতির থেকে বেশি আলো হয়। এখানে বাইরের জগতের মতো এখানে কোনো মেকানিক্যাল যন্ত্র নেই। কিন্তু তারা তাদের ইচ্ছে মতো ব্যবহার যোগ্য যন্ত্র বানিয়েছে।
যতো দেখছি ততোই অবাক হচ্ছি। চারপাশটা ঘুরে দেখতো লাগলাম। কেউ হয়তো কখনো কল্পনা করবে না এই ভয়ংকর জঙ্গলের মধ্যে এতোটা সুন্দর এটা আবাসস্থল আছে। যেখানে কিছু বিশেষ মানুষ বাস করে।
আমি আর মামা ফিরে আসলাম সেই বাড়িতে। এসে দেখলাম সবাই নিজের মতো ফ্রেস হয়ে প্রস্তুত। আমরা সকালের খাবার খেয়ে রেস্ট নিতে লাগলাম। কিন্তু আমার নিজেকে আমি আটকিয়ে রাখতে পারছিলাম না। বার বার শুধু বাইরের নতুন জগত টা আমাকে ডাকতেছে।
আমি উঠে বাড়িটা দেখতে লাগলাম। ঘুরতে ঘুরতে দেখলাম বাড়ির একটা বারান্দায় কেউ একজন দাড়িয়ে আছে। দূর থেকে বুঝতো পারলাম একটা এটা মেয়ে। আমি তাকে দেখার জন্য এগিয়ে যেতে লাগলাম......
Notes! ( অনেক ক্ষেত্রে টাইপিং ভুলের জন্য ভুল বানান আসে আবার ফোনের অন্য জায়গায় চাপ পড়ে বানান ভুল হয়ে যায়। তাই এগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। অনেকে গল্প বড় করে দিতে বলেন। আমি চাই বড় করে দিতে। কিন্তু নিজের কিছু কাজের কারণে লেখায় বেশি সময় দিতে পারি না। তবে বড় করে দেওয়া চেষ্টা করি সব সময়।......
Post a Comment