জঙ্গলের রহস্য ২য় পর্ব।Bengali Story, Jungle er Rohossho Part 2

জঙ্গলের রহস্য

(২য় পর্ব)

Bengali Story, Jungle er Rohossho Part 2

#গল্প_জঙ্গলের_রহস্য

#দ্বিতীয়_পর্ব

পরের দিন সকাল খবর পেলাম। জঙ্গলের পাশের রাস্তায় চারটা লাশ পাওয়া গেছে তাও রক্ত শূন্য।খবরটা আমি রায়হান দুইজনই অনেক ভয় পাইছি। আমরা তাড়াতাড়ি করে ঘটনাস্থলে গেলাম। 

গিয়ে দেখি পুলিশ লাশ গুলো নিয়ে চলে গেছে। আর কিছু পুলিশ ও সাথে কিছু ইনভেস্টিগেশনের লোক ছিলো। জানার পরও তাদের মধ্যে একজনকে জিজ্ঞেসা করলাম

- স্যার। কি হয়েছে এখানে?

- চারটা লাশ পাওয়া গেছে। 

- চারটা লাশ, কিন্তু তাও আপনাদের দেখে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। 

- এটা এমন আর কি। এই জঙ্গলের পাশে এমন কয়েকটা লাশ মাঝে মাঝেই পাওয়া যায়। এসব দেখতে দেখতে আমাদের অভ্যাস হয়ে উঠেছে। 

- লাশ গুলো কিভাবে এখানে এলো, কারা মারলো এ বিষয়ে আপনারা কেউ জানেন না? 

- জানলে কি আর এই লাশ গুলো এখানে পাওয়া যেতে। লাশ গুলোর ফরেনসিক রিপোর্ট থেকে কিছু পাওয়া যায় না। শুধু লাশ গুলো ঘাড়ে দুটো ফুটো পাওয়া যায়। কেউ যেনো কামড়িয়ে ফুটো করে দিছে। সাথে লাশ গুলোর শরীরে কোনো রক্ত পাওয়া যায় না। এসব রহস্য জানার জন্য জঙ্গলে অনেক সরকারি গোয়েন্দা লোক ভিতরে গেছে। কিন্তু পরের দিন তাদেরও এমন লাশ পাওয়া গেছে। সরকার থেকে এই জঙ্গলে প্রবেশ নিষেধ। 

- আচ্ছা। পুরো জঙ্গল নাকি তারকাঁটা দিয়ে ঘেড়া দেওয়া। কিন্তু এই রাস্তার পাশে দেওয়া নাই কেনো। 

- এখানেও দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু  যতো বারই এখানে তারকাঁটা  বা দেয়াল দেওয়া হয়েছিলো ততোবারই তার পরের দিন এসে ভাঙা দেয়াল পাওয়া গেছে। অনেকবার চেষ্টা করেও এখানে দেয়াল দেওয়া যায় নাই। আর লাশ  গুলো সব এই স্থানেই পাওয়া যায়। তাদের মোবাইল এর লোকেশন ট্র্যাকিং করে এই স্থানেই পাওয়া যায়। 

পুলিশটা আবার বললতে শুরু করলো.. 

- আপনাদের এখন আসতে হবে। যদি ওরা দেখে আপনাদের সাথে কথা বলছি তাহলে সমস্যা হবে। 

আমি রায়হান চলে আসলাম। আমরা শহরে চলে আসলাম এসে একটা হোটেল বসে কিছু খেতে লাগলাম আর দুইজনই কালকের আর আজকের লাশের ব্যাপারে কথা বলতে লাগলাম। রায়হান বললো

- শুধু শুনে আসছি জঙ্গলটা ভয়ানক। কিন্তু কাল রাতে যা দেখলাম তা দেখে মনে হচ্ছে এটা শুধু ভয়ানকই না মৃত্যু কারখানা। 

- হুম ঠিক বলেছিস। যতো লাশ পাওয়া গেলো এই জঙ্গলের পাশের রাস্তায়। আচ্ছা এই জঙ্গলের নাম কি?  

- ব্লাক ফরেস্ট বলে সবাই কিন্তু আমি আসল নাম জানি না। তবে পাশের রাস্তাটা ফরেস্ট রোড নামে পরিচিত। 

আমি আবার বললাম,,, 

- তোর জানা মতে এমন লোক আছে কি, যে এই বিষয় বলতে পারবে। 

- আমি কেন শহরের কোনো লোকই বলতে পারবে না। 

দুই জনই গল্প করতেছিলাম তথনই আমাদের ভার্সিটির শিক্ষক আজাদ স্যার আসলো। তিনি ইতিহাস নিয়ে পড়েছেন। এবং এখানে বর্তমানে শিক্ষকতা করতেছেন। তিনি নতুন জয়েন করেছেন। স্যার একদম যুবক। এখনো বিয়ে করে নি। আমরা স্যারকে সালাম দিলাম। স্যার আমাদের দেখে আমাদের সাথে বসে পড়লো। আমরা স্যারের সাথে কথা৷ লতে লাগলাম। স্যার বললো

- তোমাদের দেখে কেমন যেনো চিন্তিত মনে হচ্ছে। কোনো সমস্যা নাকি? 

আমরা দুইজনই স্যারকে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা বললাম। স্যার এসব শুনে বললো 

- আমি শুনেছি শুধু জঙ্গলের পাশে রাস্তা দিয়ে রাত হলে কেউ যায় না। কেউ বলে ভূত আছে কেউ বলে জিন। কিন্তু তোদের মুখে এসব শুনে সত্যি ভ য় পাবার মতো। 

রায়হান বললে,,,

- স্যার এখন কি করা উচিৎ। এসব সম্পর্কে কার কাছে জানতে পারবো তাও তো জানি না। 

স্যার বললো 

- ফুয়াদ তুমি যে বাড়িটায় থাকো সেটা একদম জঙ্গলের পাশে। শুধু একটা বাড়ি সেখানে আর কোনো বাড়ি নেই। আমার মনে হয় বাড়ির মালিক হয়তো কিছু জানবে। 

- হয়তো স্যার। লোকটার ৮৫-৯০ বছর বয়স হবে। কিন্তু তিনি তাও এখনো লাঠি ছাড়া হাটতে পারে। মোটামুটি সব কাজই পারে। উনারে দেখে আমি অবাক হই। ( আমি) 

- চলো তাহলে লোকটার কাছে। ( স্যার) 

আমরা  খাওয়া দাওয়া করে স্যার সহ আমি রায়হান যেতে লাগলাম বাড়ির দিকে। যাওয়ার সময় রাস্তাটা দিয়ে যেতে শরীর কেমন যেনো করতেছে। হয়তো ভয়ে এমন হচ্ছে। 

আমরা বাড়িতে গিয়ে সোজা বৃদ্ধ লেকটার ফ্লাটে গেলাম। গিয়ে দরজায় নক করতেই একটা একজন মহিলা দরজা খুলে দিলো। মহিলাটা এখানে কাজ করে। আমরা বললাম আপনার মালিক বাসায় আছে। মহিলাটা আমাদের দেখিয়ে দিলো। আমরা তার কাছে গেলাম। 

তিনি আমাদের তিনজনকে দেখে কিছুটা অবাকই হলো। আমাকে চিনতে পারছে কিন্তু বাকি দুইজনকে নতুন দেখছে। আমাকে বললো এরা কারা। আমি তাদের পরিচয় দিয়ে দিলাম। তিনি আমাদের বসতে বললেন। ঠিক সেই সময় স্যার বলে উঠলো 

- আমরা বসতে আসি নাই আমরা এই জঙ্গল সম্পর্কে জানতে এসেছি। যদি জেনে থাকনে আমাদের সব বলেন? 

- আমার উপর যদি সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারেন তাহলে আসেন আমার সাথে। 

আমরা তিন জন কোনো কথা না বলে তার পিছনে যেতে লাগলাম। তিনি আমাদের একটা রুমে নিয়ে গেলে না। তারপর আমাদের বসতে বললেন। 

তারপর কাজের মহিলাটা এসে আমাদের তিনজনকে চা দিলেন। তারপর লোকটা আসলেন। এসে ঘরের কোনে থাকা পুরাতন আমলের একটা কাঠের সিন্দুক খুললেন। সিন্দুক থেকে কয়েকটি পুরাতন কাগজ নিয়ে এসে আমাদের সামনে রাখলেন। তারপর তিনি বলতে লাগলেন... 

- সময়টা তখন আনুমানিক ১৮০০ সাল হবে। চারদিকের যতো রাজ্য আছে সব ইংরেজরা দখল করে নিচ্ছিলো। ইংরেজদের নিয়ম অনুসারে সকল রাজারা তাদের রাজ্য পরিচালনা করছিলো। কিছু কিছু রাজ্য ছিলো তারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতেছিলো। এই রাজ্যও ছিলো তাদের একটা। 

কিন্তু এখানকার রাজা রামনাথ রায় ইংরেজদের মেনে নিতে পারছিলেন না। রাজা ছিলেন পরিবারের সবচেয়ে বড় ভাই। সেই সূত্রে তিনি রাজ গদি পেয়েছেন। রাজার মোট ১২ ভাই ছিলেন। তাদের কোনো বোন ছিলেন না। 

ইংরেজদের উপর মহল থেকে চাপ আসতে শুরু করে রাজার উপর। ইংরেজরা প্রায় চিঠি পাঠাতো। রাজা যেনো তাদের আনুগত্য মেনে নেয়। 

কিন্তু রাজা কোনো ভাবেই মানবে না। ইংরেজরা রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঘোষণা দেয়। রাজা চিন্তা পড়ে যায়। ব্রিটিশদের এতো বড় বাহিনীর সাথে কিভাবে যুদ্ধ করবে। 

সেই সময় রাজ্য এক নতুন লোকের আবির্ভাব হয়। তিনি ছিলেন একজন শয়তান পূজারী। কালো যাদু করতেন। আগে যুগে উন্নত চিকিৎসা ছিলো না। লোকটা কালো যাদু করে মানুষকে ভালো করে তুলতে থাকে। 

লোকটার নাম রাজ্যের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। রাজার কানেও যায় লোকটার কথা। একদিন লোকটা রাজার সাথে দেখে করতে আসে। লোকটা রাজাকে এসে কালো যাদু করার কথা বলে। 

ইংরেজদের কথা রাজ্যের সব লোক জানতে পেরেছে। রাজা রাজ্য নিয়ে ভয়ে ছিলো। তাই রাজাও  কালো যাদু করতে রাজি হয়। রাজা তার ১২ ভাইকে নিয়ে  সেই লোকটার সাথে কালো যাদু করতে থাকে।

এই কালো যাদুটা ছিলো শয়তানের সাথে রাজা ও তার ভাইয়ের আত্নার চুক্তি। শয়তান তাদের আত্না নিয়ে তাদের ড্রাকুলার শক্তি দিবে। কিন্তু এই শক্তিটা তারা শুধু  ৬ দিনের জন্য ব্যবহার করতে পারবে। ৬ দিন হলে তারা তার শক্তি আর ব্যবহার করতে পারবে না। ড্রাকুলাতে রুপান্তরিত হওয়ার পর তাদের মানুষের রক্ত খেতে হবে। তারা যতো রক্ত খেতে পারবে তাদের ততো শক্তি আসবে।কিন্তু ৬ দিন পর তারা আর কোনো মানুষের রক্ত খেতে পারবে না এবং সাথে শক্তিও ব্যবহার করতে পারবে না। 

কথা মতো রাজা সহ তার ১২ ভাই ড্রাকুলার শক্তি গ্রহণ করে। এই কালো শক্তির কথা শুধু রাজ্যের কয়েকজন লোক ছাড়া  অন্য কেউ জানতে পারে না। 

রাজ্য থেকে অনেক লোকে ধরে নিয়ে আসা হয়। রাজারা তাদের রক্ত খেয়ে শক্তি বাড়াবে। রাজ্যে লোক নিখোঁজ হওয়া ঘটনায় সবাই অনেক ভয় পায়। ৩ দিনে রাজারা ৫০০ লোকের রক্ত খায়। তারা ভয়ানক শক্তি লাভ করে। 

রাজ্য মানুষ নিখোঁজ হওয়া কথা ইংরেজদের কানেও যায় তারা মনে হয় কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরেছিলো তাই তারা কখনো এই রাজ্য অক্রমন করে নাই। রাজ্য হঠাৎ লোক হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় অনেক লোক রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যায়। ৬ দিনে রাজ্য ছেড়ে অনেক লোক চলে যায়। ৬ দিন যাওয়ার পর রাজারা ড্রাকুলার শক্তি ব্যবহার কতে থাকে সাথে মানুষের রক্তও খেতে থাকে। এটাই ছিলো সবচেয়ে বড় ভুল........

চলবে....?

0/Post a Comment/Comments