জঙ্গলের রহস্য ৩য় পর্ব।Bengali Story, Jungle er Rohossho Part 3

জঙ্গলের রহস্য

(৩য় পর্ব)

জঙ্গলের রহস্য ৩য় পর্ব।Bengali Story, Jungle er Rohossho Part 3

#তৃতীয়_পর্ব

৬ দিন যাওয়ার পর রাজারা ড্রাকুলার শক্তি ব্যবহার কতে থাকে সাথে মানুষের রক্তও খেতে থাকে। এটাই ছিলো সবচেয়ে বড় ভুল।শয়তানের সাথে তাদের চুক্তিটা ছিলো ৬ দিন পর যদি তারা ড্রাকুলার শক্তি ব্যবহার করে এবং সাথে মানুষের রক্ত খেতে থাকে, তাহলে তাদের আত্না শয়তান নিয়ে নিবে। সাথে ড্রাকুলার শয়তানি আত্না সারাজীবন তাদের মধ্যে থেকে থাকে। 
তাদের একটা সীমানা আছে। এই সীমানার বাইরে তাড়া কখনো যেতে পারবে না। সীমানাটা হলো রাজবাড়ীটা। তারা সারাজীবন এর জন্য ড্রাকুলার শক্তি লাভ করার ফলে রাজ্যের সকল মানুষের রক্ত ক্ষেতে থাকে। অনেক লোক প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যায়। 
ধীরে ধীরে এলাকাটা জনশূন্য হয়ে পড়ে। কিছু বছর পর পুরো এলাকা জঙ্গলে পূর্ণ হয়ে যায়। তার কিছু বছর পর ভিনদেশী কিছু লোক এসে এখানে বসবাস শুরু করে। কিন্তু কি এক অজানা কারণে তাড়া এই জঙ্গল বাদে বাকি এলাকায় বসবাস করতে শুরু করে। সেখান থেকেই আজকের এই নগরী। 
বৃদ্ধ লোকটি এগুলো একসাথে বলে চুপ হয়ে গেলেন। আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগলো। লোকটাকে বললাম 
- ড্রাকুলারা তাদের রাজবাড়ী থেকে বের হতে পারে না তাহলে মানুষের লাশ গুলো আসলো কেমনে?
- এই রহস্য কেউ বলতে পারবে না। কিন্তু যারাই ভিতরে যায় তাদেরই এই অবস্থা হয়।(লোকটা)
আমার মনে কিছুটা খটকা লাগে। এগুলো কি সত্যি হয়। ড্রাকুলার কথা আমি যখন ১ম শুনি তখন কাহিনিটা এই রকমই ছিলো। পৃথিবীতে যখন ১ম ড্রাকুলার আবির্ভাব হয় তখন সময়টা ১০০০ সাল হবে। আশে পাশে রাজ্য গুলো ড্রাকুলার রাজ্য আক্রমণ করতে থাকে। তার রাজ্যকে বাচার জন্য সেও ড্রাকুলাতে রুপান্তরিত হয়। তারপর সে তার রাজ্যকে বাচার। কিন্তু সে তার পরিবারকে বাচাতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়ে দেয়। 
আমার দেখা ১ম ড্রাকুলার মুভি Dracula - The untold story।  এই মুভিতেও এই কাহিনী বলা হয়েছে। ইতিহাস বলে ড্রাকুলা ছিলো আবার চলে গেছে। আবার অন্য ইতিহাস বলে ড্রাকুলা ছিলো না। লোকটার কথা গুলো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। তাই লোকটা কাছে পুরাতন পাতা গুলো চাইলাম। কিন্তু লেখা গুলো অন্য অক্ষরে লেখা যা বুঝার ক্ষমতা আমার নেই। 
লোকটার কাছ থেকে আমরা চলে আসলাম। স্যার আমি রায়হান রাস্তা দিয়ে হাঁটতে ছিলাম। হঠাৎ স্যার বললো
- তোমাদের দুইজনের কি মনে হয় লোকটা সত্যি বলতেছে। ( স্যার)
- আমার মনে হয় সত্যি বলতেছে ( রায়হান) 
- স্যার ওনার কথা গুলো কেমন যেনো বানানো কাহিনী মনে হচ্ছে। যদি ড্রাকুলার রাজবাড়ীর বাইরে আসতে না পারে তাহলে রাস্তা থেকে লোকগুলো কে নিয়ে যায়। ( আমি) 
- আমার মনে হচ্ছে লোকটা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলতেছে। ওনার কথা বলার ধরণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এটা পিছনে অন্য রহস্যা আছে আমার মনে হয়। আমাদের একবার জঙ্গলের ভিতরের যাওয়া দরকার। ( স্যার)
- আমারো তাই মনে হয় স্যার ( আমি) 
- এই ভাবে কোনো সেফটি না নিয়ে ভিতরে যাবে৷। তাছাড়া ওনার কথা গুলো সত্যি হতেও পারে (রায়হান) 
- ইসলাম বলে জিন আছে। জিন মানুষকে ভয় দেখাতে মজা পায়। যে জিনকে যতো ভয় পাবে জিন তাকে ততো ভয় দেখাবে। তুমি ইসলামকে বিশ্বাস করবা নাকি ওই লোকটাকে।( স্যার)
স্যার এর কথা শুনে রায়হান চুপ হয়ে গেলো। স্যার আবার বলতে শুরু করলো
- দেখো এই রহস্য নিয়ে যখন কথা বলা শুরু করেছি তাই এর শেষ দেখে ছাড়বো। আমরা সম্পূর্ণ সেফটি নিয়ে যাব। ভিতরে থাকলে একমাত্র জিন থাকতে পারে আর দোয়ার কাছে জিন কিছুই না। জিন না থাকলে অন্য কিছু থাকবে। তবে তা ড্রাকুলা বা অন্য কিছু নয়। ( স্যার)
- কিন্তু স্যার কি সেফটি নিবেন? ( আমি) 
- আমার পরিচিত একজন আছে। তার কাছে চোরাই বন্দুক পাওয়া যায়। আমরা ভাড়া করে নিবো। (স্যার)
- কিন্তু স্যার কখন যাবেন? ( রায়হান)
- আমরা আগে দিনের বেলা যাবো। যেহেতু দিনে জঙ্গল শান্ত থাকে। তাই দিনের বেলাই ভালো হবে। 
- স্যার তিন জন না হয়ে যদি পাঁচ জন যাওয়া যেতো তাহলে সাহস আরো পেতাম। তাহলে ভয়টাও কম লাগতো। ( আমি) 
স্যার কিছুটা সময় ভাবলো। তারপর বললো 
- কে যাবে? 
- স্যার আমার মামা আছে। তিনি প্যারানর্মাল বিষয় নিয়ে কাজ করেন। যদি মামাকে বলা যায় তাহলে  তিনি না করবেন না। ( আমি)
- ওকে যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমরা শুক্রবার যাবো। কারণ শুক্রবার জঙ্গলের পাশে পুলিশরা থাকবে না। তখন সহজে ঝামেলা ছাড়া প্রবেশ করা যাবে। 
আমরা স্যারের কথা মতো সব কিছু রেডি করতে লাগলাম। জঙ্গলের মধ্যে যেতে হবে তাই পূর্ণ প্রস্তুতি দরকার। আমি মামাকে ফোন করে আসতে বললাম।মামাও রাজি হলো। মামা সাথে তার একজন বন্ধুকে নিয়ে আসবে। 
আমরা মোট পাঁচ জন হলাম। সবার জন্য প্রয়োজনী জিনিস সাজাতে লাগলাম। জঙ্গলের মধ্যে গেলে হয়তো সহজে বের হতে পারবো না।দিক হারিয়ে যেতে পারি। 
রায়হান আর আমি সবার জন্য কিছু ওয়াটারপ্রুফ কাপড় সাথে রেইনকোট আর সাথে মিলিটারি জুতা কিনে নিলাম। জঙ্গলে এগুলো ছাড়া চলা একদম অসম্ভব। এটা আমার জীবনের ১ম Adventure  আবার হতে পারে এটাই শেষ।
বিকালের দিকে স্যার আসলো আমার বাসায়। কোথা থেকে তিনটা বন্দুক নিয়ে আসছে। এগুলো পুরাতন বন্দুক। এগুলো চালানোর জন্য কোনো প্রশিক্ষণ লাগে না। স্যার সন্ধা হওয়া আগেই বাসায় চলে গেলেন। সাথে রায়হান ও। একা থাকতে ভয় লাগতেছে। 
নিজের মনে খটকা লাগতেছে। তাই নিজের ঘর থেকে বের হয়ে আবার বাড়ির মালিক বৃদ্ধ লোকটির কাছে গেলাম। তাকে আমি দাদু  বলে ডাকি। আমি গিয়ে বললাম
- দাদু হয়তো আমাদের থেকে কিছু লুকাচ্ছেন। আমাকে পুরোটা বলুন। 
তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললো 
- আমি জানি তুমি আবার আসবে। তোমাদের দেখে আমার আগে মনে হয়েছিলো তোমরা জঙ্গলের ভেতরে যাবে। তাই তোমাদের ঘটনাটা আমি ইতিহাস থেকে বানিয়ে বলেছিলাম। তোমার ভয় পেয়ে আর না যাও সেখানে।
কিন্তু তোমার যাবেই সেখানে। তাই আর সত্যটা লুকাবো না। তুমি যে জঙ্গলের মাঝে বাড়িটা দেখছো। সেটা আমাদের পূর্বপুরুষ এর। ভালো চলছিলো সব কিছু। কিন্তু হঠাৎ করেই রাজ্যটা একটা পিশাচের নজরে পড়ে। পিশাচ হলো জিনদের একটা জাতি তারা। তারা মানুষের রক্ত ছাড়া থাকতে পারে না। 
সেই পিশাচের সাথে ১২ টা পরী থাকে। এরা হলো পিশাচ কন্যা। যারা তার পিতা পিশাচ এর কথা মতো চলে। তোমরা যে রাস্তা টা দিয়ে প্রতিদিন যাওয়া আসা করো। ওই রাস্তাট এই জঙ্গলের একটা অংশ। 
রাত ৮ টা বাজলেই পরী আর পিশাচরা নিজের আসল রুপে ফিরে আসে। রাস্তায় থাকা লোকদের ধরে নিয়ে গিয়ে রক্ত খেয়ে তাদের লাশ রাস্তার পাশে রাখে। 
- তাদের কি কখনো মারা যাবে না। ( আমি)  
- তাদের শক্তির সাথে আমরা কখনো পারবো না। তবে তাদের উপর একটা অভিশাপ আছে। তারা কখনো এই জঙ্গলের বাইরে যেতে পারবে না। তবে তাদের মারার একটা উপায় আছে। যা আমি আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পেয়ে আসছি। তারা এতোটাই ভয়ংকর যে তাদের শক্তির কাছে কেউ কিছুই না। 
এসব বলে দাদু একটা রুমে চলে গেলেন। তারপর একটা ধনুক নিয়ে এসে আমার হাতে দিলেন। তবে ধনুকের তীর গুলোর মাথায় সুচালো পাথর।দাদু আবার বলতে শুরু করলো 
- তোমার কাছে তীর গুলোকে সাধারণ মনে হতে পারে। কিন্তু এগুলো মোটেও সাধারণ নয়। 
প্রাচীন কাল থেকে চীনে ড্রাগনের পুজা করা হতো। তারা ড্রাগনকে তাদের দেবতা মানে। চীনে এক ধরনের পাথর পাওয়া যায়। চীনে এগুলো কে ড্রাগনের ডিম বলে তারা। সেই পাথর কেটে ড্রাগন গ্লাস৷ তৈরি করা হয়। সেই ড্রাগন গ্লাস দিয়ে এই তীর গুলো তৈরি। 
এই তীর গুলো দিয়েই এক মাত্র পিশাচ কন্যা পরী গুলো মারা যাবে। তবে পিশাচকে মারতে হলে তার সাথে থাকা একটা প্রাণীকে মারতে হবে। তবে প্রাণীটার বর্ণনা কেউ দিতে পারবে না। 
- রাস্তাটা জঙ্গলের সীমানায় আছে। রাস্তাটাকে বাদ দিয়ে বিকল্প রাস্তা তৈরি করলেই হতো। ( আমি) 
- বিকল্প রাস্তার উপায় ছিলো না। আর এই যুগে এসে কেউ জিন পরীকে ভয় পায় না। তাই অনেকে রাতে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে তাদের শিকার হয়েছে। শহরে একট মাত্র আমি সঠিক কাহিনী জানি। অন্য যারা জানত তাড়া অনেক আগেই চলে গেছেন। সঠিক কাহিনী কেউ জানে না বলেই তাদের মধ্য এখনো ভুল ধারণা আছে এই জঙ্গল নিয়ে।
তোমরা যেহেতু জঙ্গলের ভেতরে যাচ্ছ তাই তোমাদের কাছে একটাই প্রত্যাশা যে, তোমরা জঙ্গলটিকে অভিশাপ মুক্ত করো। ( দাদু)
দাদু সাথে কথা বলে আমি চলে আসলাম রুমে। রুমে এসে তীর গুলোকে ভালো ভাবে দেখতে লাগলাম। 
রাত অনেক হয়েছে তাই ঘুমিয়ে গেলাম। পরের দিন.....
চলবে....

0/Post a Comment/Comments