জঙ্গলের রহস্য
(১ম পর্ব)

রাত যখন ১০ টা বাজে। আমি রাস্তা দিয়ে হাটতেছিলাম। রাস্তার দুই পাশে জঙ্গল। এক পাশে ঘন জঙ্গল আর অপর পাশে হালকা। যে পাশে জঙ্গল কম সেইটা একটা পার্ক। তাই মানুষের চলাচল থাকে। পার্কের পাশে রাস্তা এবং রাস্তার পরে একটা ভয়ংকর জঙ্গল। এতোটাই ঘন যে দিনের সূর্যের আলোও জঙ্গলের মাটিতে পরে না।
এই জঙ্গলের পাশে একটা বড় বাড়ি আছে। আমি সেখানেই ভাড়া থাকি। আমি ছাড়াও আরো কয়েকটা পরিবার থাকে। বাড়িটা একটা বৃদ্ধ লোকের। সে এবং তার স্ত্রী এখানে থাকে। সন্তান গুলো সব বাইরের দেশে। বাড়িটা যেতে হলে জঙ্গলের পাশের এই রাস্তা দিয়েই যেতে হয়।দিনের বেলা এই রাস্তা দিয়ে প্রচুর যাতায়াত থাকে। কিন্তু রাত ৮ঃ০০ টা বাজলে এই রাস্তা টা একদম নিরম হয়ে যায়।
আমিও এতো রাত করি না। সাধারণত আমি ৮ টার আগে বাসায় যাই। আজ একটু দেরি হলো। অনেক দিলো হলো কোথাও ঘুরি না। তাই আজ ঘুরতে গেছিলাম। সেখান থেকে আসতেই দেরি হলো।
নিরব রাস্তা। পুরো রাস্তার পথিক আমি একাই। শরীর ছমছম করছে। ছোট থেকেই আমি ভূতে বিশ্বাস করি না। কিন্তু তাও ভয় লাগতেছে। একাই রাস্তা দিয়ে হাটতেছি৷ হঠাৎ করেই মনে হচ্ছে কে যেনো আমার পিছন পিছন হাটতেছিলো।
শুনেছিলাম রাতে রাস্তা দিয়ে একা যাওয়ার সময় যদি মনে হয় কেউ পিছন পিছন হাটতেছে, তাহলে যেনো পিছনে না তাকাই। তাই আমিও পিছনে তাকাচ্ছিলাম না। ভয় নিয়ে দ্রুত হাটা শুরু করলাম। মনে হচ্ছে আমার পিছনে কেউ আমার সাথে দ্রুত হাটতে শুরু করলো৷ আমি আরো দ্রুত হাঁটতে শুরু করলাম।
পিছন থেকে আশা পায়ের শব্দ আরো বেশি করে আসতে লাগলো। আমি থেকে গেলাম পায়ের শব্দও থেমে গেলো। মনে ভুল ভেবে আবার হাটতে শুরু করলাম। এবার পিছন থেকে আওয়াজটা আসতেছিলো না।
হঠাৎ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আশা একটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করে উঠলো। কুকুরটার হঠাৎ এভাবে চিৎকারে আমি এতোটাই ভয় পেয়েছিলাম, ভয়ে আমিও জোরে চিৎকার দেই।
আমার চিৎকার শুনে সামনে থেকে কেউ একজন লাইট নিয়ে দৌড়ে আসতেছিলো। লোকটা আমার কাছে আসতেই চিনতে পারলাম। লেকটা রহমান চাচা৷ আমি যে বাড়িতে থাকি উনি ওই বাড়িতে দারওয়ান এর চাকরি করে।
আমার কাছে এসেই বলতে লাগলো,
- বাবা তুমি এতো রাতে এখানে কি করো। তুমি জানো না এতো রাতে এই জঙ্গলে থাকা নিরাপদ না। আমি তো তোমার চিৎকার শুনেই দৌড়ে আসলাম।
- চাচা আসতে একটু দেরি হয়েছে আজ। চলেন...
আসার সময় দেখলাম কুকুরটা আমার পিছনের দিকে তাকিয়ে এখনো ঘেউ ঘেউ করতেছে। চাচা কুকুরটিকে তাড়িয়ে দিলো।কুকুর টা ঘেউ ঘেউ করতে করতে চলে গেলো।
রহমান চাচা আর আমি বাসায় আসলাম। এসেই আমি রহমান চাচাকে জিঙ্গাসা করলাম,
-চাচা এই জঙ্গলে কি হয়েছে? এখানে রাতে থাকা নিরাপদ না।
- আমি জানি না বাবা। তিন বছর হলো এখানে জয়েন করছি। শুধু এইটুকু জানি কেউ রাত ৮ টার পর এই জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে না। মালিক আমাকে বাধা করেছে। আমি অনেক লোককে বলেছিলাম এই রাস্তা সম্পর্কে। কেউ কিছু বলতে পারে না।
আমি হতাশ হয়ে চলে গেলাম আমি রুমে। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ভাবতে লাগলাম কুকুরটার আচরণের কথা। আমি পিছনে কি দেখে ঘেউ ঘেউ করতেছিলো। অনেকেই বলে পশু পাখিরা অদৃশ্য কিছু দেখতে পায়। তাহলে কুকুর টা কি আমার পিছনে অদৃশ্য কিছু দেখেছিলো। এসব ভাবতেছিলাম। রাতের খাবার এর কথা ভুলেই গেছিলাম।
শরীর খুব ক্লান্ত ছিলো। তাই রাতে আর রান্না করতে ইচ্ছে করছিলো না। একা বাসায় থাকি। রান্না করার কেউ নেই। তাই নিজেই রান্না করে খাই। মাঝে মাঝে বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসি। আজ ভুলে গেছিলাম। তাই না খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
এই জঙ্গলটা দিনের বেলা কতো সুন্দর থাকে। রাত হলেই ভয়ংকর হয়ে উঠে। দিনে চারদিকে থেকে পাখির কিচিরমিচির সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশ। শহর এর ভিতরে এমন এক জায়গা আর বলে বুঝাতে পারবো না। আমি সাধারণত নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে পছন্দ করি। তাই এই বাসাটা ভাড়া নিছিলাম। তাছাড়া বাসা মালিকও ভালো। এই সময় এমন বাসা মালিক পাওয়া যায় না।
সব কিছু বিবেচনায় আমি এই বাসাটা ভাড়া নিয়েছি। তিন মাস হলো আমি এখানে এসেছি। এর আগে আমি এখানে কখনো আসি নাই। ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য আসতে হলো। আমি ফুয়াদ হাসান শোভন। এইবার অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি হইছি। আমার ছাত্রাবাসে থাকতে ভালো লাগে না। তাই বাসা ভাড়া নিয়েছি।
দিনের বেলা জঙ্গলের মনোরম পরিবেশ যে কাউকেই পাগল করে দিবে। কিন্তু রাতের বেলা এই জঙ্গল একদমই অস্বাভাবিক লাগে।যখন থেকে এখানে উঠেছি। তখন থেকেই রাতের বেলা অদ্ভুত রকমের শব্দ শুনতে পাই। মনে করতাম পশুপাখির আওয়াজ হবে। কিন্তু শব্দগুলো একদমই অন্যরকম। পশুপাখির শব্দ এরকম একদমই না। কাউকে কিছু বলতে পারি না। অনেকে মনে করবে এতো বড় হয়েছে তা এসব ভয়। তাই জন্য কিছু বলি না।
রাতে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। শুনতে পেলাম জঙ্গল থেকে বিটক বিটক শব্দ আসছে। বার বার ঘুমাতে চেষ্টা করছিলাম। ঘুম আসতেছিলো না। অন্যদিনের তুলনার বজকের শব্দটা একটু বেশি ভয়ংকর। ভয় লাগতেছিলো জানালা খুলতে।
ভয় নিয়ে জানালা খুলে দেখলাম। জঙ্গলের গাছ গুলো অস্বাভাবিক রকমের দুলতে ছিলো। অনেক বড় ঝড় আসলেও এই রকম দুলে না। আর বিকট শব্দ করতেছিলো। ভয় পেয়ে জানালা বন্ধ করে দেই। রাতে আর ঘুমা আসে নাই।
ফজরের আজানা দিলো। চারপাশে সব কিছু শান্ত হয়ে গেলো। আমার ঘুম চলে আসলো চোখে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে দেরি করে উঠলাম। কাড়ণ ভার্সিটি অফ ছিলো। সকাল উঠে বাড়ির ছাদে যেতে লাগলাম।
তিন মাস হলো উঠেছি। বাড়ির সব কিছু দেখা শেষ। কিন্তু এই বাড়ির ছাদে কখনো যাই নি। বাড়িটি চারতলা। বাড়ি ছাদে গিয়ে উপর থেকে জঙ্গলটি দেখতে লাগলাম।
ছাদের উপর থেকে জঙ্গলটি দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগতেছিলো৷ কিন্তু জঙ্গলের গাছ গুলো মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক রকমের বড় ছিলো। এই রকম গাছ এখন দেখতে পাওয়া যায় না।
ছাদ থেকে জঙ্গলের চারপাশে দেখতেছিলাম। হঠাৎ লক্ষ করলাম। দূরে একটা বড় বিল্ডিং। বড় বিল্ডিং বললে ভুল হবে, এটা একটা রাজ প্রাসাদের মতো কিছু একটা মনে হচ্ছিলো। অনেক দূরে হওয়ায় ভালো মতো দেখতে পাচ্ছিলাম না।
তাই হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে জুম করো দেখতে লাগলাম। কিন্তু প্রাসাদের মতো জায়গাটা মোবাইলে ঘোলা আসতেছিলে। বাকি সব জায়গা একদম পরিষ্কার ছিলো। অবাক হলাম বিষয়টা নিয়ে।
ছোট থেকে শুনে আসতেছি, ভৌতিক কিছু ক্যামেরায় বন্দি হয় না। মনে মনে ভাবতে লাগলাম ভৌতিক কোনো ব্যাপার নাতো। কাল থেকে এসব ভাবতে ভাবতে মাথা লেগে আসতেছে। একটু ঘুরা দরকার। তাই বন্ধু রায়হানকে ফোন দিয়ে একটা জায়গায় আসতে বললাম। আমিও রেডি হয়ে সেখানে গেলাম। রায়হান বলল,,
- কিরে কি হইছে এতো তাড়াতাড়ি আসতে বললি যে।
- তোরে সব খুলে বলতেছি চল আগে বলি।
তারপর রায়হানকে সব খুলে বললাম। কাল আমার,সাথে যা কিছু ঘটেছে। রাতের জঙ্গলের কথা। সাথে সকালের ওই বাড়িটির কথা। রায়হান এসব শুনে বলতেছে
- তুই যেই জায়গায় বাসা ভারা নিছিস সেই জায়গার মতো ভয়ানক জায়গা আর একটাও নেই। সেই জঙ্গলের আসে পাশে প্রায়ই দুই তিনটে করে লাশ পাওয়া যায়। তাও আবার রক্ত শূন্য। এই জঙ্গলের মাঝে একটা জমিদার বাড়ি আছে। আজ পর্যন্ত যেই ওই জঙ্গলের ভিতর যেই গিয়েছে তারই রক্ত শূন্য লাশ পাওয়া গেছে৷ সবাই মুখে মুখে বলে ওই জঙ্গলে পিশাচ বসবাস করে। সরকারি লোক অনেক বার এই ব্যাপারে রহস্য বের করতে গেছে ততোবারই তাদের রক্ত শূন্য লাশ পাওয়া গেছে। তারপরই ১৯৯৭ সাল থেকে এই জঙ্গলের ভিতর যাওয়া একদমই নিষেধ করেছে সরকার।
সরকারি লোক রাতে অনেক বার রাতে এই জঙ্গলে পাহাড়া দিতো। কিন্তু তাদের লাশ পাওয়া যেতে জঙ্গলের পাশে। অনেকের লাশ পাওয়া যায় না। সেই থেকে সরকার জঙ্গলের চারদিকে বড় প্রাচীর দিয়েছিলো। আজ ২৫ বছরে অনেকে জায়গায় প্রাচীরের দেওয়াল ভেঙে গেছে এবং এই ২৫ বছরে অনেক লোক নিখোঁজ হয়েছে এই শহর থেকে। যারা নিখোঁজ হয়েছে তাদের সবাইকেই জঙ্গলের ওই রাস্তা থেকেই নিখোজ হয়েছে। তাদের মোবাইলের লাস্ট লোকেশান ট্রাক করে দেখেছে জঙ্গলের পাশের রাস্তা।
রায়হান এর থেকে এসব কথা শুনে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম। এখন থেকেই আমার ভয় হতে শুরু করেছে। দুপুর ১২ টা বাজে। শীতের দিন তাও আমি ঘামতেছিলাম। আমি রায়হানকে বললাম,
- তুই আমার সাথে চল। আমার একা ওই বাড়িতে যাওয়া শক্তি নাই। আর একা থাকতেও পারবো না।
- আচ্ছা দেখি।
তারপর রায়হান সহ আমি তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসি। আসার সময় রাস্তা এতোটাই ব্যাস্ত ছিলো যে কেউ অনুমান করতে পারবে না রাতে এই জায়গাটা এতোটা ভয়ানক।
রাতে আমি আর রায়হান রান্না করে কিছু খেয়ে নিলাম। আমি রায়হানকে বললাম,
- শুন আজ রাতে ঘুমাবো না। কাল শুক্রবার। ভার্সিটি বন্ধ আছে। আজ রাত জেগে দেখবো কি হয় জঙ্গলে।
- ঠিক আছে।
আমরা দুইজনই জেগে ছিলাম। গল্প করতেছিলাম যাতে ঘুম না আসে। ধীরে ধীরে জঙ্গল থেকে শব্দ আসতে শুরু করলো। ১ম দিকে শব্দ এতোটাও তীব্র ছিলো না। রাত যতো গভীর হতে থাকে শব্দ ততো তীব্র হতে থাকে। জানালা দিয়ে দুইজনই দেখলাম গাছ গুলো কালকের থেকে আজকে আরো বেশি দুলতেছিলো। কিন্তু গাছপালা কোনো শব্দ হচ্ছিলো না। শুধু অদ্ভুত রকমের ডাক আসতেছি। এই ডাকগুলো যে কাউকে ভয় পাইয়ে দিবে।
আমরা আরো লক্ষ করলাম জঙ্গলের মাঝে হঠাৎ হঠাৎ করেই আলো জ্বলতেছিলো আবার বন্ধ হচ্ছি। দুইজনের মাথা কাজ করতেছিলো না। দুইজনই ভয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে দোয়া পড়তে পড়তে শুয়ে পড়লাম।
পরের দিন সকাল খবর পেলাম। জঙ্গলের পাশের রাস্তায় চারটা লাশ পাওয়া গেছে তাও রক্ত শূন্য.....
চলবে...?
#সূচনা_পর্ব
#গল্প_জঙ্গলের_রহস্য
Nice
ReplyDeleteThank you
DeletePost a Comment